পূর্ববিরোধের জের ধরে পাবনার সুজানগর পৌরসভার কর্মচারী আল আমিন প্রামাণিককে (২৭) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। একই সময় আল আমিনের ভাই রজব আলীকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে পাবনা সদর উপজেলার এবং আতাইকুলা থানার সাদুল্লাহপুর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহত রজব আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত আল আমিন সুজানগর পৌরসভার রাধানগর মহল্লার মৃত আব্দুস সাত্তার প্রামাণিকের ছেলে। তিনি সুজানগর পৌরসভার টিকাদানকারী পদে চাকরি করতেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাবনা ডিবি, আতাইকুলা ও সুজানগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুজানগর পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তোফা এবং তার ভাই সুজানগর পৌর যুবলীগের সভাপতি জুয়েল রানাসহ ৪ জনকে আটক করেছে। তাদের কাছ থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাবনা-সুজানগর মহাসড়কে এবং সুজানগর পৌরসভায় কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন। এছাড়া কর্মচারী হত্যার প্রতিবাদে সুজানগর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার কালোব্যাজ ধারণসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার পাবনার আদালতে আগের একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আল আমিন প্রামাণিক ও তার বড়ভাই রজব আলী প্রামাণিক (৪২)। দুপুর আড়াইটার দিকে দুই ভাই একটি সিএনজিযোগে আতাইকুলা থানার সাদুল্লাপুর মোড়ে পৌঁছলে প্রতিপক্ষের একদল সন্ত্রাসী দুই ভাইয়ের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
গুরুতর আহত দুইজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং তার ভাই আহত রজব আলীকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, সুজানগর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা এবং তার ভাই পৌর যুবলীগের সভাপতি জুয়েল রানার সঙ্গে আল আমিন ও রজবদের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। এরই জের ধরে রোববার রাতে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
নিহত আল আমিনের স্ত্রী মুন্নী খাতুন (২৪) অভিযোগ করেন, পূর্ববিরোধ এবং রোববারের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার জেরেই তোফা এবং জুয়েল রানার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই পাবনা ডিবি ও সুজানগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুজানগর পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তোফা এবং তার ভাই সুজানগর পৌর যুবলীগের সভাপতি জুয়েল রানাসহ ৪ জনকে আটক করে। আটক অন্য দুইজন হলেন লিটন (২৫) এবং শ্রী গৌর কুমার (২৬)। তাদের কাছ থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তসহ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন তোফাসহ চারজনের আটকের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে ওসি বলেন, জব্দ করা অস্ত্র লাইসেন্স করা নাকি অবৈধ এবং এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুজানগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
এদিকে আল আমিন হত্যার ঘটনায় সুজানগরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাবনা-সুজানগর মহাসড়কে এবং সুজানগর পৌরসভায় কয়েক দফা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। এ সময় সুজানগরের সব দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা।
এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পৌর মেয়র রেজাউর করিম রেজা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহীন।
পৌর মেয়র জানান, পৌর কর্মচারী আল আমিন হত্যার প্রতিবাদে সুজানগর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার কালোব্যাজ ধারণসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।